Thursday, October 6, 2011

অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা (10)

দশম দফা : সামাজিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রবর্তন 

যে কোন উত্তম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিচায়ক হচ্ছে তার সামাজিক কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্যে গৃহীত ব্যবস্থা। প্রচলিত সমস্ত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শে এজন্যেই সমাজকল্যাণের কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সে সবের কোনটিই ইসলামের সমকক্ষ নয়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামেই জনকল্যাণের জন্যে সর্বপ্রথম সর্বাত্মক জোর ও সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শুধু আল-কুরআনে ও হাদীস শরীফে যে নির্দেশ রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলে গোটা সমাজব্যবস্থায় এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত হওয়া সম্ভবপর। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আপন আপন মর্জি-মাফিক যতটুকু করতে ইচ্ছুক ততটুকুই মাত্র জনসাধারণ পেতে পারে। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রে একদলীয় সরকারের নিজস্ব নীতি ও প্রয়োজন অনুসারে জনকল্যাণমূলক নীতি গৃহীত হয়ে থাকে। এর কোনটিই পূর্ণাংগ ও সুষ্ঠ হতে পারে না।
জনকল্যাণের জন্যে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য ছাড়াও ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ব্যক্তিকেও নিজস্ব সামার্থ ও যোগ্যতা অনুযায়ী এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তির ধন-সম্পত্তিতে অন্যেরও হক বা অধিকার রয়েছে। আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-
তুমি আত্মীয় স্বজন ও গরীব এবং পথের কাঙালগণকে তোমার নিকট হতে তাদের পাওনা দিয়ে দাও।
সূরা বনি ইসরাইর : ২৬ আয়াত
রাসূলে করীম (সা) বলেছেন-
তোমাদের ধন সম্পদে যাকাত ছাড়াও অধিকার রয়েছে।
তিরমিযী
উপরের আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, কোন ব্যক্তির উপার্জিত অর্থে তার নিজের ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের অন্যান্য অভাবগ্রস্তদের অধিকার রয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের অধিকারী হয় এবং তার আত্মীয়দের মধ্যে কেউ প্রয়োজনের চেয়ে কম উপার্জন করে তাহলে সামর্থ্য অনুযায়ী ঐ আত্মীয়কে সাহায্য করা তার সামাজিক দায়িত্ব। আত্মীয়দের মধ্যে কেউ এমন না থাকলে প্রতিবেশী বা পরিচিতদের মধ্যে অভাবগ্রস্ত বা প্রয়োজন পূরণে অক্ষম ব্যক্তিকে সাহায্য করা ঐ ব্যক্তির পক্ষে অবশ্য কর্তব্য। এমন ব্যাপকভাবে প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নির্দেশ পৃথিবীর আর কোন ধর্মে বা মতাদর্শে ইসলামের পূর্বেও দেওয়া হয়নি, পরেও না। বস্তুত: এই নির্দেশের মধ্যে পারষ্পরিক সাহায্য, সহযোগিতা ও সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধনের দায়িত্ব অনুভূতির প্রেরণা রয়েছে।
জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে ও সমাজের সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের জন্যে রাসূল (সা) দুটি বলিষ্ঠ প্রাতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন- যাকাত ও বায়তুলমাল। যাকাত কারা দেবে, কিভাবে তা আদায় হবে এবং কারা যাকাতের হকদার সে সম্পর্কে ইতিপূর্বেই বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে বায়তুল মাল সৃষ্টির উদ্দেশ্য, এর অর্থাগমের উৎস ও ব্যয়ের খাত প্রভৃতি সম্বন্ধেও বলা হয়াছে। ইসলামী সমাজে বায়তুলমাল ও যাকাত একযোগে যে বিপুল সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করতে পারে এবং দু:স্থ, দারিদ্রপীড়িত, অক্ষম, বৃদ্ধ, পঙ্গু, বিধবা ও ইয়াতীম শিশুদের যে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারনে তা আর কোনভাবেই সম্ভব নয়। ইমলাম পূর্ব যুগের কোন সমাজে তা ছিল না, এখনও নেই।
রাষ্ট্রীয় প্রশাসন লোক ঢোকানোর জন্যে সমস্যর সাময়িক উপশম করতে পারে বটে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ সাধন হয় না। স্বেচ্ছায় মানুষ যখন কোন কাজে সাড়া দেয় এবং অংশগ্রহণ করে তখন যে দুর্বার শক্তির সৃষ্টি হয় তার মুখে কোন বাধাই যেমন বাধা নয়, তেমনি কোন কাজই কঠিন নয়। যাকাত ও বায়তুলমাল ছাড়াও মীরাসী আইনের প্রয়োগ, মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন, সম্পত্তিতে নারীরা অধিকারের প্রতিষ্ঠা, করযে হাসানার বিধান এবং উপার্জন ভোগ-বন্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য নির্দেশ একদিকে বহু সামাজিক অনাচারের পথ যেমন চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ও জনসাধারণের দীর্ঘ মেয়াদী কল্যাণ ও উন্নয়নের পথ সুগম করেছে। বস্তুত : উপরোক্ত বিষয়গুলির সমষ্টিফলই হচ্ছে একটি সুখী, অভাবমুক্ত ও সমৃদ্ধশালী সমাজ। আইয়ামে জাহেলিয়াত ও তার পূর্ববর্তী সমাজ ব্যবস্থাসমূহ হতে ক্রমে ক্রমে যে পংকিলতা ও অনাচার অর্থনীতিতে সংক্রমিত হয়েছিল সেসব দূর করার জন্যেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত পথে রাসূলে করীম (সা) কাজ করে গেছেন। তাঁল সে পথ অনুসরণ করেছেন মহান খুলাফায়ে রাশেদীন (রা)। ফলে অর্থনীতিতে সূচিত হয়েছিল বিপ্লব। প্রয়োগ ও সাফল্যে সৃষ্টি হয়েছিল উন্নয়নের গতিবেগ। তারই সুদূরপ্রসারী ফল হিসেবে এক সুখী ও সমৃদ্ধশালী, সাহিত্য-শিল্পকলা ও বিজ্ঞানে উন্নত সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল।

লেখক : শাহ্ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

The Hadith of the day

Abu Umamah (May Allah bepleased with him) reported:

Messenger of Allah (PBUH) said, "Allah decrees the (Hell) Fire and debars Jannah for the one who usurps the rights of a believer by taking a false oath.''

One man asked: "O Messenger of Allah! Even if it should be for an insignificant thing?'' He said, "Even if it be a stick of the Arak tree (i.e., the tree from which Miswak sticks are taken)".

[Muslim]. Commentary: The importance of rights of people is evident from the threat of severe punishment that this Hadith holds for the usurpers of these rights. Their case will depend entirely on the Will of Allah. Such defaulters may be forgiven even in the initial stage or they may be pardoned by Allah after some punishment.
   Riyad-us-Saliheen (214)