Sunday, September 4, 2011

অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা (5)

পঞ্চম দফা : বায়তুলমালের প্রতিষ্ঠা

রাসূলে করীম (সা) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে বায়তুল মালেরও প্রতিষ্ঠা করেন। বায়তুলমাল বলতে সরকারের অর্থ সম্বন্ধীয় কর্মকান্ড বুঝায় না। বরং বিভিন্ন উৎস হতে অর্জিত ও রাষ্ট্রের কোষাগারে জমাকৃত ধন-সম্পদকেই বায়তুলমাল বলা হয়। ইসলামী রাষ্ট্রের সকল নাগরিকেরই এতে সম্মিলিত মালিকানা রয়েছে। প্রচলিত রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা রাজকীয় ধনাগারের সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুলমালে সঞ্চিত ধন-সম্পদের উপর জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে আপামর জনসাধরণের সাধারণ অধিকার স্বীকৃত। রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে একজন লোকও যেন মৌলিক মানবিক প্রয়ৌজন হতে বঞ্চিত না হয় তার ব্যবস্থা করা বায়তুলমালের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব।
প্রত্যেক নাগরিকই তা প্রয়োজনীয় পরিমাণ ন্যূনতম অর্থ বা সম্পদ বায়তুলমা হতে গ্রহণ করতে পারে। সাধ্যনুসারে পরিশ্রম করেও যদি জীবিকার অভাব পূরণ না হয় বা সমাজের স্বচ্ছল লোকজন তাদের দরিদ্র আত্মীয় ও পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করার পরও মৌলিক প্রয়োজন অপূর্ণ থেকে যায় তবেই মাত্র বায়তুলমাল হতে সাহায্য গ্রহণ করা যাবে । ইসলামে এভাবেই সমস্ত নাগরিকই জন্যে আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে । পৃথিবীর ইতিহাসে এ ব্যবস্থা শুধু প্রথমই নয়, মৌলিকও।
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বায়তুলমালের অর্থ সংস্থানের উৎসগুলি নিন্মরূপ :

১। অর্থ সম্পদ ও গবাদি পশুর যাকাত
২। সদাকাতুল ফিতর
৩। কাফফারাহ
৪। ওশল/ওশরের অর্ধেক
৫। খারাজ
৬। গণীমতের মাল ও ফাই
৭। জিজিয়া
৮। খনিজ সম্পদের আয়
৯। নদী ও সমুদ্র হতে প্রাপ্ত সম্পদের এক-পঞ্চামাংশ
১০। ইজারা ও কেরায়ার অর্থ :
১১। মালিক ও উত্তরাধিকারহীন সম্পদ
১২। আমদানী ও রফতানী শুল্ক
১৩। রাষ্ট্রের মালিকানা ও কর্তৃত্বধীন জমি, বন ব্যবসায় ও শিল্পের মুনাফা
১৪। শরীয়াহ মোতাবেক আরোপিত কর এবং
১৫। বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অনুদান ও উপটৌকন।

বায়তুলমালের আয় বৃদ্ধির জন্যে উল্লেখিত উৎসসমূহকে অবশ্যই পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। এসমস্ত উৎস হতে যথাযথভাবে অর্থাগম নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু বন্টনের উদ্দেশ্যে রাসূলে করীম (সা) পদাংকে অনুসরণ করে মহান খুলাফায়ে রাশিদীনের (রা) আমলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ যাকাতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
যে সমস্ত খাতে বায়তুলমালের অর্থ ব্যয়ের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে সেগুলি হচ্ছে :

১। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার কর্মচারীদের বেতন
২। বন্দী ও কয়েদীদের ভরণ-পোষণ
৩। লা-ওয়ারিশ শিশুদের প্রতিপালন
৪। অমুসলিমদের আর্থিক নিরাপত্তা
৫। করযে হাসানা প্রদান এবং
৬। সামাজিক কল্যাণ

রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারী কর্মচারীদের বেতন :
ইসলামী রাষ্ট্রের তাঁর বেতন বায়তুল মাল হতেই নেবেন। তবে এর পরিমাণ হবে তাঁর প্রয়োজন ও সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য অনুসারে সাধারণ প্রচলিত হারের সমান। এ ক্ষেত্রে হযরত উমর ফারুক (রা) এর বক্তব্য বিশেষ প্রণীধানযোগ্য। তিনি বলেন-
তোমাদের সামগ্রিক ধনসম্পদ ইয়াতীমের ধনসম্পদের সমতূল্য এবাং আমি যেন ইয়াতীমের মালেরই রক্ষাণবেক্ষণকারী। অতএব আমি যদি ধনী হই-তবে আমি বায়তুলমাল হতে কিছুই গ্রহণ করব না। আর যদি দরিদ্র ও অভাবী হই, আমি বায়তুলমাল হতে কিছুই গ্রহণ করব না। আর যদি দরিদ্র ও অভাবী হই, তবে অপরিহার্য পরিমাণ কিংবা সাধারণ প্রচলিত মানের বেতনই আমি গ্রহণ করব।
আবু ইউসূফ-কিতাবুল খারাজ
অথচ আজ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহেরই রাষ্ট্রপ্রধানদের বার্ষিক বেতন ও বিভিন্ন এলাউন্সের পরিমাণ সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এক বিরাট অংশ। রাষ্ট্রপ্রধানগণ বেতন ছাড়াও নানা ধরনের এলাউন্স ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এত বেশী পেয়ে থাকেন যে তার হিসেব করলে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে পার্থক্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০,০০০:১।
ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় সরকারী কর্মচারীদের জন্যে ভরণ-পোষণের দায়িত্বপালনক্ষম বেতন নীতির কথা বলা হয়েছে। নিন্মপদ বা সাধারণ কর্মচারীদের ন্যূনতম প্রয়োজন অপূর্ণ রেখে উচ্চপদস্থ অফিসারদের বিলাস-ব্যাসনের ব্যবস্থার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। বেতন নির্ধারণ সম্পর্কে হযরত উমর ফারুক (রা) এর গৃহীত নীতি এ প্রসঙ্গে সবিশেষ মনোযোগের দাবী রাখে। সে নীতিতে মূখ্য বিচার্য বিষয় ছিল একজন ব্যক্তি-

১। ইসলামের জন্যে কি পরিমাণ দু:খ ভোগ করেছে।
২। ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কতখানি অগ্রসর হয়েছে
৩। ইসলাম প্রতিষ্ঠার কতখানি কষ্ট স্বীকার করেছে
৪। ইসলামী জীবন যাপনের জন্যে প্রকৃত প্রয়োজন কতখানি এবং
৫। কতজন লোকের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত রয়েছে।

বন্দী ও কয়েদীদের ভরণ-পোষণ : অত্যাধুনিক এই সভ্য যুগেও বন্দী ও কয়েদীদের সঙ্গে যে অমানুষিক আচরণ করা হয়ে থাকে তা কারো অবিদিত নয়। এদের ন্যূন্যতম প্রয়োজনও মেটানো হয় না। বরং নির্মম ও নির্দয় ব্যবহারের শিকার হয়ে থাকে তারা। ক্ষুৎপিপাসায়, বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায় বন্দীরা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বা বন্দী শিবিরগুলিতে সোভিয়েত রাশিয়ার লেবার ক্যাম্প ও আফগানিস্তানের যুদ্ধবাদীদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ এর প্রকৃষ্ট নজীর।
যুদ্ধাবন্দী ও বিভিন্ন অপরাধে কয়েদীদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাবার জন্যে ইসলামী সরকার বাধ্য। রাসূলে করীম (স) বন্দী ও কয়েদীদের সঙ্গে যে অপূর্ব সুন্দুর ব্যবহার করেছেন দুনিয়ার ইতিহাসে তার নজীর বিরল। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রে যখন এই নীতি অনুসৃত হতো তখন পাশাপাশি রোমান ও বাইজেন্টাইন। শাসকবর্গ তাদের যুদ্ধবন্দী ও কয়েদীদের সঙ্গে যে ব্যবহার করতো তা ছিল নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক।
লা-ওয়ারিশ শিশুদের প্রতিপালন : ইয়াতীম, অনাথ ও লা-ওয়ারিশ শিশুদের লালন পালন করা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য। মনে রাখা দরকার, যে সমাজে ইয়াতীমের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ ছিল সাধারণ ঘটনা সেই সমাজেই রাসূলের (সা) বিপ্লবী চেতনার ফলে লা-ওয়ারিশ শিশুরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। তাদের লালন-পালন ও জীবিকার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতেই ন্যস্ত হয়। রাসূল (সা) বলেন-
যে বেক্তি কোন দায়ভার রেখে যাবে তা বহন করা করা আমার কর্তব্য।
আবু দাউদ
বায়তুল মাল হতেই এই দায়ভার বহনের বিধান করা হয়েছিল। অমুসলিমদের লা-ওয়ারিশ সন্তানদের সম্পর্কেও এই একই নীতি অনুসৃত হতো।
অমুলিমদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান : ইসলামের সামাজিক নিরাপত্তা শুধুমাত্র মুসলিম নাগরিকদের জন্যেই নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-ভাষা-লিঙ্গ নির্বিশেষে আবাল বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই এর অন্তর্ভূক্ত। বিধর্মীরা অক্ষম অবস্থায় জিজিয়া দেবে না, বরং রাষ্ট্র তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করবে বায়তুল মাল হতে।
করযে হাসানা প্রদান :আইয়ামে জাহেলিয়া বা তার পূর্ববর্তী যুগে বিনা প্রতিদানে ঋণ দেবার রীতি চালু ছিল না। বরং সুদই ছিল লেনদেনের ভিত্তি। রাসূলে করীম (সা) এই রীতির মূলোচ্ছেদ করেন এবং সুদই ছিল লেনদেনের ভিত্তি। রাসূলে করীম (সা) এই রীতির মূলোচ্ছেদ করেন এবং বিনা সুদে ঋণ বা করযে হাসানা দেবার রীতি চালু করেন। বিশ্বে প্রচলিত আর কোনও ধরনের অর্থনীতিতে এই ব্যবস্থা পূর্বেও ছিল না, আজও নেই।
সামাজিক কল্যাণ : সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধন হতে পারে এমন সব কাজে বায়তুলমাল হতেই অর্থ ব্যয় করার বিধান রয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এই অর্থেই জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের উদ্দেশ্যে কাজ করা হতো। সরাইখানা নির্মাণ, শিক্ষাবিস্তার, পানির নহর খনন প্রভৃতি তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য। এ যুগেও শিক্ষার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বিস্তার, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ পদ্ধতির ব্যাপক সম্প্রসারণ, পথিকদের সুবিধার ব্যবস্থা সবই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিনামূল্যে নির্দিষ্ট একটা স্তর পর্যন্ত শিক্ষাদান, রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ, পুস্করিণী খনন সবই সমাজকল্যাণের আওয়াভুক্ত। মুসাফিরখানা স্থাপন, ভিক্ষাবৃত্তির উচ্ছেদ, গরমৌসূমে কাজের বিনিময়ে খাদ্যের যোগান, পুষ্টিহীনতা দূর, শ্রমিক কল্যাণ প্রভৃতিও সরকারের দায়িত্ব। এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে বায়তুল মালের অর্থ ও সম্পদ হবে সবচেয়ে বড় সহায়ক।
কোন নাগরিক যখন দারিদ্র হয়ে পড়বে, বৃদ্ধ হয়ে উপার্জন ক্ষমতা হারাবে তখন তার যাবতীয় প্রয়োজন মেটাবার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রের উপর নাগরিকদের এই অধিকার ন্যায়সঙ্গত ও স্বাভাবিক। রাসূলের (সা) পর খুলাফায়ে রাশেদীনও (রা) এই দাবী পূরণে যত্নবান ছিলেন।

লেখক : শাহ্ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Saturday, September 3, 2011

The Hadith of the day

Abu Musa (May Allah be pleased with him) reported:

 

The Prophet (PBUH) said, "The honest Muslim trustee who carries out duties assigned to him (in another narration he said, "Who gives''), and he gives that in full, with his heart overflowing with cheerfulness, to whom he is ordered, he is one of the two givers of charity".

[Al-Bukhari and Muslim].
Commentary: This Hadith also mentions a very important principle to the effect that everyone must wholeheartedly perform the duty assigned to him by the state. If he is appointed custodian of the Bait-ul-Mal (public exchequer), he must fulfill his duty with utmost honesty. If he is not envious of anyone, nor harms anybody, nor behaves niggardly then he will be entitled to the same reward which will be due to the person who entrusted him that duty. Thus this Hadith enjoins every Muslim to perform his official duties wholeheartedly and to the best of his ability.
   Riyad-us-Saliheen (180)