Thursday, September 8, 2011

অর্থনীতিতে রাসূল (সা) এর দশ দফা (6)

ষষ্ঠ দফা : মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন 

বিশ্বের ইতিহাসে মানবতার বন্ধু রাহমাতুল্লিল আলামীনই (সা) সর্বপ্রথম মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন করেন। তাঁর পূর্বে কোন দেশ বা অর্থনীতিতেই শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রয়াস গ্রহীত হয়নি। এমনকি পরেও কোন দেশ বা মতবাদে সমতুল্য কোন নীতি গৃহীত হয়নি। আজ হতে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসূল (সা) প্রবর্তিত শ্রমনীতি আজও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শ্রমনীতি। পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অনুসৃত শ্রমনীতি মানবিক নয়, ইনসাফভিত্তিক তো নয়ই। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যবহার, তাদর বেতন ও মৌলিক প্রয়োজন পূরণ ইত্যাদি প্রসঙ্গে রাসূলে করীমের (সা) প্রদর্শিত পথ ও হাদীসসমূহ থেকেই ইসলামের বৈপ্লবিক ও মানবিক শ্রমনীতির সম্যক পরিচয় পাওয়া যাবে। মজুরদের অধিকার সম্বন্ধে তিনি বলেন-
তারা তোমাদের ভাই! আল্লাহ তাদের দায়িত্ব তোমাদের উপর অর্পণ করেছেন। কাজেই আল্লাহ যাদের উপর এরূপ দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন তাদের কর্তব্য হলো তারা যে রকম খাবার খাবে তাদেরকেও সেরকম খাবার দেবে, তারা যা পরিধান করবে তাদেরকে তা পরাবার ব্যবস্থা করবে। যে কাজ করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ও সাধ্যতীত তা করার জন্যে তাদেরকে কখনও বাধ্য করবে না। যদি সে কাজ তাদের পক্ষে কষ্টকর ও সাধ্যতীত তা করার জন্যে তাদেরকে কখনও বাধ্য করবে না। যদি সে কাজ তাদের দিয়েই করাতে হয় তা হলে সে জন্যে তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য অবশ্যই করতে হবে।
বুখারী
অন্যত্র রাসূলে করীম (সা) শ্রমিকদের সম্পর্কে বলেছেন, শ্রমিককে এমন কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না, যা তাদেরকে অক্ষম ও অকর্মণ্য বানিয়ে দেবে।
তিরমিযী
তাদের উপর ততখানি চাপ দেওয়া যেতে পারে, যতখানি তাদের সামর্থ্যে কুলায়। সাধ্যাতীত কোন কাজের নির্দেশ কিছুতেই দেওয়া যেতে পারে না।
মুয়াত্তা, মুসলিম
মজুরদের বেতন, উৎপাদিত পণ্যে তাদের অংশ ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন-
মজুরের মজুরী তার গায়ের ঘাম শুকাবার পূর্বেই পরিশোধ কর।
ইবনে মাজাহ, বায়হাকী
মজুরকে তার কাজ হতে অংশ দান কর। কারণ, আল্লাহ মজুরকে কিছুতেই বঞ্চিত করা যেতে পারে না।
মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল
উপরোক্ত হাদীসসমূহ হতে যেসব মূলনীতি পাওয়া যায় সেগুলোই রাসূলে কারীম (সা) প্রবর্তিত মানবিক শ্রমনীতি। সংক্ষেপে এগুলো হচ্ছে-
১। উদ্যোক্ত বা শিল্প মালিক মজুর-শ্রমিককে নিজের ভাইয়ের মতো মনে করবে। সহোদর ভাইয়ের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে এ ক্ষেত্রেও সে রকম সম্পর্ক থাকবে।
২। অন্ন বস্ত্র-বাসস্থান প্রভৃতি মৌলিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিক উভয়ের মান সমান হবে। মালিক যা খাবে ও পরবে শ্রমিককেও তাই খেতে ও পরতে দেবে।
৩। সময় ও কাজ উভয় দিক দিয়েই শ্রমিকদের সাধ্যমতো দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, তার বেশী নয়। শ্রমিককে এত বেশী কাজ দেওয়া উচিৎ হবে না যাতে সে ক্লান্ত ও পীড়িত হয়ে পড়ে। এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাকে শ্রম দিতে বাধ্য করা যাবে না, যার ফলে সে অক্ষম হয়ে পড়ে। শ্রমিকের কাজের সময় নির্দিষ্ট হতে হবে এবং বিশ্রামের সুযোগ থাকতে হবে।
৪। যে শ্রমিমের পক্ষে একটি কাজ করা অসাধ্য তা সম্পন্ন হবে না এমন কথা ইসলাম বলে না। বরং সে ক্ষেত্রে আরও বেশী সময় দিয়ে বা বেশী শ্রমিক নিয়োগ করে তা সম্পন্ন করা যেতে পারে।
৫। শ্রমিকদের বেতন শুধুমাত্র তাদের জীবন রক্ষার জন্যে যথেষ্ট হলে হবে না। তাদের স্বাস্থ্য, শক্তি ও সজীবতা রক্ষার জন্যে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ভিত্তিতেই বেতন নির্ধারণ করতে হবে।
৬। উৎপন্ন দ্রব্যের অংশবিশেষ বা লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশও শ্রমিকদের দান করতে হবে।
৭। শ্রমিকদের কাজে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে তাদের প্রতি অমানুষিক আচরণ বা নির্যাতন করা চলবে না। বরং যথযথ
সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।
৮। চুক্তিমত কাজ শেষ হলে অথবা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে শ্রমিককে দ্রুত মজুরী বা বেতন পরিশোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তি বা গাফলতি করা চলবে ন।
৯। পেশা বা কাজ নির্বাচন করার ও মজুরীর পরিমাণ বা হার নির্ধারণ সম্পর্কেও দর-দস্তর করার পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার শ্রমিকের বিশেষ কোন কাজে বা মজুরীর বিশেষ কোন পরিমাণের বিনিময়ে কাজ করতে জবরদস্তি করা যাবে না।
১০। কোন অবস্থাতেই মজুরদের অসহায় করে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। তারা অক্ষম ও বৃদ্ধ হয়ে পড়লে পেনশন বা ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে বায়তুল মালের তহবিল ব্যবহৃত হতে পারে।
উপরে বর্ণিত নীতিমালার আলোকে দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যেতে পারে যে, ইসলাম মজুরের যে মর্যদা ও অধিকার স্বীকৃত হয়েছে এবং শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে যে প্রীতির সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাতে শ্রমিক-মালিক দ্বন্ধ ও সংঘাতের কোন সুযোগ থাকে না। দুইয়ের সম্মিলিত চেষ্টা ও আন্তরিকতা পূর্ণ সহযোগিতার ফলে শিল্পের ক্রমাগত উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি হওয়াই স্বাভাবিক। সর্বোপরি মুমিন মুসলমান শিল্প-মালিক ও উদ্যোক্তরা ঈমানের তাগিদে পরকালের কঠিন শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যেই এই শ্রমনীতি বাস্তবায়নে, এগিয়ে আসবে, অন্য কোন ধরনের অর্থনীতিতে যা প্রত্যাশা করা একেবারেই অসম্ভব। দুনিয়ার মজুদুর এক হও শ্লোগানসর্বস্ব সমাজতন্ত্রের বাধ্যতামূলক শ্রমদান যেমন এখানে অনুপুস্থিত, তেমনি পুঁজিবাদী মালিকের অবমাননাকর শর্ত ও লাগামহীন শোষণও নেই। শ্রমিক ও মালিক পরস্পর ভাই-এই বিপ্লবাত্মক ঘোষণই ইসলামী শ্রমনীতির মূল উপজীব্য।

লেখক : শাহ্ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান

Wednesday, September 7, 2011

The Hadith of the day

Abu Sa`id Al-Khudri (May Allah be pleased with him) reported:

Messenger of Allah (PBUH) said, "Whoever amongst you sees an evil, he must change it with his hand; if he is  unable to do so, then with his tongue; and if he is unable to do so, then with his heart; and that is the weakest form of Faith".

[Muslim]. Commentary: This Hadith contains a very important prescription to prevent the Muslim society from all things which are forbidden in Islam. So long as Muslims adhered to it and ceaselessly and fearlessly performed their obligation of enjoining the right and forbidding the wrong, their society was largely safe from many evils and sins.
   Riyad-us-Saliheen (184)